ব্যারিস্টার একটি সম্মানজনক ও বিশেষ পেশা যা আইন এবং আদালতের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই পেশায় থাকা ব্যক্তিরা উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এবং আইনি পরামর্শ দেন। ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য কঠোর পড়াশোনা এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। যুক্তরাজ্যসহ অনেক কমনওয়েলথভুক্ত দেশে ব্যারিস্টার পেশা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, তবে বাংলাদেশে এটি মূলত বিদেশে পড়াশোনা শেষে অর্জিত পদবি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ব্যারিস্টারের ইতিহাস:
ব্যারিস্টার পেশার উৎপত্তি ব্রিটেনে। মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে আইনজীবীদের মধ্যে বিভাজন ঘটে। তখন থেকেই ব্যারিস্টাররা আদালতের সামনের সারিতে মামলা পরিচালনা করেন, আর সলিসিটররা আইনি নথি প্রস্তুতি ও পরামর্শ দেন। এই দ্বৈত ভূমিকা অনেক দেশে বিদ্যমান থাকলেও কিছু দেশে এই পৃথকীকরণ নেই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ব্রিটিশ শাসনকালে এখানেও ব্যারিস্টার পেশার প্রভাব পড়েছিল। যারা যুক্তরাজ্যে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে যেতেন, তারা ব্যারিস্টার হিসেবে দেশে ফিরে আইনি প্র্যাকটিস শুরু করতেন।
ব্যারিস্টার হওয়ার প্রক্রিয়া:
ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য প্রথমে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। তারপর বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (BPTC) সম্পন্ন করতে হয়। এ কোর্স সম্পন্ন করার পর ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের চারটি সম্মানজনক ইনস অব কোর্টের মধ্যে কোনো একটির সদস্যপদ লাভ করতে হয়। এগুলো হলো:
- লিঙ্কনস ইন
- গ্রেস ইন
- ইনার টেম্পল
- মিডল টেম্পল
ইনস অব কোর্ট থেকে ব্যারিস্টার হওয়ার আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়া গেলে তিনি আদালতে মামলা পরিচালনার অনুমতি পান। ব্যারিস্টার হিসেবে কার্যকর হতে হলে চেম্বারে যোগদান করতে হয়, যা এক ধরনের সহযোগী পরিবেশ, যেখানে ব্যারিস্টাররা কাজ করেন।
ব্যারিস্টার বনাম সলিসিটর:
একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো ব্যারিস্টার এবং সলিসিটর একই ধরনের পেশা। প্রকৃতপক্ষে, এই দুই পেশার ভূমিকা ভিন্ন। সলিসিটর মূলত ক্লায়েন্টদের পরামর্শ দেন, নথি প্রস্তুত করেন এবং মামলা পরিচালনার জন্য প্রাথমিক কাজ করেন। অন্যদিকে, ব্যারিস্টার মূলত আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা লড়েন। তবে বর্তমানে কিছু দেশে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে, সলিসিটরদেরও আদালতে উপস্থাপিত হওয়ার অনুমতি রয়েছে।
বাংলাদেশে ব্যারিস্টারের গুরুত্ব:
বাংলাদেশে ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য দেশের আইনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নয়, বরং যুক্তরাজ্যের ইন্স অব কোর্টের অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এ কারণে, ব্যারিস্টাররা সাধারণত দেশে একজন উঁচু মর্যাদার সঙ্গে বিবেচিত হন। অনেক বিখ্যাত আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং বিচারকরা বাংলাদেশে ব্যারিস্টার ছিলেন। যেমন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ও আইনি মিত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন একজন ব্যারিস্টার।
ব্যারিস্টার হওয়ার চ্যালেঞ্জ:
ব্যারিস্টার হওয়া সহজ কাজ নয়। এটি অনেক সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। BPTC কোর্স সম্পন্ন করার জন্য প্রায় দুই বছর সময় লাগে এবং খরচ বেশ উচ্চ। এছাড়া ইনস অব কোর্টে প্রবেশের প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। তাই যারা ব্যারিস্টার হতে চান তাদের একাগ্রতা এবং অধ্যবসায়ের সাথে পড়াশোনা করতে হয়।
ব্যারিস্টারদের দায়িত্ব:
ব্যারিস্টারদের প্রধান দায়িত্ব হলো আদালতে মামলা পরিচালনা করা। তারা ক্লায়েন্টদের পক্ষে মামলা লড়েন এবং আইনি যুক্তি উপস্থাপন করেন। এছাড়া তারা আইনি পরামর্শ দিয়ে ক্লায়েন্টদের সাহায্য করেন। বিশেষত, জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ব্যারিস্টারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণ:
বাংলাদেশে অনেক প্রখ্যাত ব্যারিস্টার আছেন, যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় অংশগ্রহণ করেছেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এর মতো ব্যক্তিরা আইনি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সুপরিচিত।
উপসংহার:
ব্যারিস্টার পেশা অত্যন্ত সম্মানজনক এবং চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশে আইন পেশায় ব্যারিস্টারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা এবং আইনি পরামর্শ প্রদানে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যদিও ব্যারিস্টার হওয়া কঠিন, তবে যারা আইন পেশায় উচ্চ মানের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য এটি একটি মূল্যবান পেশা।