ডিএনএ (DNA) আর আরএনএ (RNA) শব্দগুলো আমরা সবাই শুনেছি। সাধারণভাবে, এগুলো আমাদের দেহের গঠন আর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ডিএনএ আর আরএনএ কী, এবং এদের মধ্যে পার্থক্য কী? সহজ বাংলায় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজকের এই লেখায় পাবেন।
ডিএনএ কী?
ডিএনএ বা ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড হচ্ছে আমাদের দেহের সকল তথ্যের ভাণ্ডার। এটি প্রতিটি জীবিত কোষের ভেতর থাকে এবং আমাদের দেহের গঠন, বৈশিষ্ট্য এবং কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রণ করে।
ডিএনএ কেমন দেখতে?
ডিএনএ দেখতে অনেকটা মোচড়ানো সিঁড়ির মতো। আমরা একে ডাবল হেলিক্স বলি। ডিএনএর এই গঠন তার স্থায়িত্ব বাড়ায়, যাতে এতে থাকা তথ্য নষ্ট না হয়।
ডিএনএ-এর মূল কাজ
ডিএনএ-এর প্রধান কাজ হলো আমাদের দেহের সকল বৈশিষ্ট্যের তথ্য সংরক্ষণ করা। যেমন, আমাদের চোখের রঙ, উচ্চতা, ত্বকের রঙ ইত্যাদি। এছাড়াও, ডিএনএ থেকে আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি হয়, যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আরএনএ কী?
আরএনএ বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডও আমাদের শরীরে পাওয়া যায়। এটি মূলত ডিএনএ-এর নির্দেশ মেনে প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
আরএনএ কেমন দেখতে?
আরএনএ দেখতে অনেকটা একক সিঁড়ির মতো, যাকে আমরা সিঙ্গেল স্ট্র্যান্ড বলি। অর্থাৎ, এটি একক রেখার মতো থাকে এবং তাই ডিএনএ-এর মতো মজবুত না হলেও বেশ নমনীয়।
আরএনএ-এর মূল কাজ
আরএনএ ডিএনএ-এর বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে। ডিএনএ-তে যেসব তথ্য আছে, সেগুলো কোষের ভেতর প্রোটিন তৈরির কাজে লাগে, আর সেই কাজগুলো আরএনএ করিয়ে দেয়।
ডিএনএ আর আরএনএ-এর মূল পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | ডিএনএ | আরএনএ |
---|---|---|
গঠন | ডাবল হেলিক্স | সিঙ্গেল স্ট্র্যান্ড |
কাজ | জেনেটিক তথ্য সংরক্ষণ | প্রোটিন তৈরিতে সহায়তা |
অবস্থান | মূলত কোষের নিউক্লিয়াসে | নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমে |
বেস (Base) | A, T, C, G | A, U, C, G |
শর্করা | ডিঅক্সিরাইবোज़ | রাইবোয |
বিস্তারিতভাবে ডিএনএ ও আরএনএ পার্থক্য
গঠন (Structure)
ডিএনএ-তে দুটি স্ট্র্যান্ড থাকে, যা মোচড়ানো অবস্থায় থাকে এবং অনেক শক্তিশালী। আরএনএতে একটি স্ট্র্যান্ড থাকে, তাই এটি একটু নরম ও নমনীয়।
উদাহরণ: আপনি ডিএনএ-কে রশি দিয়ে মোড়ানো দুটি রেখার মতো ভাবতে পারেন, আর আরএনএ-কে একটি সাধারণ, একক রেখা।
অবস্থান (Location)
ডিএনএ মূলত নিউক্লিয়াসে থাকে, কারণ এটি অনেক বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধরে রাখে। অন্যদিকে, আরএনএ নিউক্লিয়াসে তৈরি হলেও সাইটোপ্লাজমে যায় এবং কাজ শেষ করে।
কাজ (Function)
ডিএনএ প্রধানত আমাদের দেহের বৈশিষ্ট্যগুলো সংরক্ষণ করে, যেমন চোখের রঙ, উচ্চতা ইত্যাদি। অন্যদিকে, আরএনএ প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিএনএ ও আরএনএ-এর বেস বা বেস পেয়ারিং
ডিএনএ এবং আরএনএ-তে বেস নামে কিছু বিশেষ অংশ থাকে, যেগুলোর মাধ্যমেই এরা একে অপরের সাথে জোড়া বেঁধে থাকে।
ডিএনএ-এর বেস
ডিএনএ-এর চারটি বেস আছে – এডেনাইন (A), থাইমিন (T), সাইটোসিন (C), এবং গুয়ানিন (G)। এগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে জোড়া বাঁধে, যেমন A-T এবং C-G।
আরএনএ-এর বেস
আরএনএ-এর চারটি বেস হলো – এডেনাইন (A), ইউরাসিল (U), সাইটোসিন (C), এবং গুয়ানিন (G)। ডিএনএ-এর মতো থাইমিন (T) না থাকায় এর জায়গায় ইউরাসিল (U) থাকে। আরএনএ-তে A-U এবং C-G হিসেবে জোড়া বাঁধে।
ডিএনএ ও আরএনএ-এর প্রকারভেদ
ডিএনএ এক ধরনেরই হয়, কিন্তু আরএনএ-এর তিনটি ধরনের ভাগ রয়েছে।
তিনটি প্রধান ধরনের আরএনএ
১. mRNA (মেসেঞ্জার আরএনএ): এটি ডিএনএ-এর বার্তা কোষে পৌঁছে দেয় এবং প্রোটিন তৈরির নির্দেশ দেয়। ২. tRNA (ট্রান্সফার আরএনএ): এটি বিভিন্ন অ্যামিনো এসিড প্রোটিন তৈরির জন্য স্থানান্তর করে। ৩. rRNA (রাইবোসোমাল আরএনএ): এটি প্রোটিন তৈরির কাজটি সম্পন্ন করতে সহায়তা করে।
আরএনএ-এর প্রকার | কাজ |
---|---|
mRNA | প্রোটিন তৈরির নির্দেশ দেয় |
tRNA | অ্যামিনো এসিড স্থানান্তর করে |
rRNA | প্রোটিন তৈরি করে |
ডিএনএ ও আরএনএ-এর উদাহরণ ও ব্যবহার
ডিএনএ-এর সাহায্যে বংশগত তথ্য পাওয়া যায়, যেমন বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্য সন্তানদের মধ্যে কিভাবে চলে আসে।
আরএনএ-এর মাধ্যমে কোষের ভিতরে বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি হয়, যা আমাদের শরীরের সব কাজ করে।
ডিএনএ ও আরএনএ কীভাবে কাজ করে?
ডিএনএ থেকে প্রথমে mRNA তৈরি হয়। এই mRNA কোষের সাইটোপ্লাজমে চলে যায় এবং প্রোটিন তৈরির জন্য নির্দেশ দেয়। তারপর tRNA সেই নির্দেশ মেনে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করে। সবশেষে rRNA প্রোটিন তৈরি সম্পন্ন করে।
ডিএনএ ও আরএনএ-এর গুরুত্ব কেন?
ডিএনএ এবং আরএনএ দুটোই আমাদের দেহে গুরুত্বপূর্ণ। ডিএনএ না থাকলে আমাদের শরীর কেমন হবে তা জানা যেত না, আর আরএনএ না থাকলে প্রোটিন তৈরি সম্ভব হতো না।
ডিএনএ-তে আমাদের সকল জেনেটিক তথ্য জমা থাকে, আর আরএনএ সেই তথ্যের নির্দেশ মেনে প্রোটিন তৈরি করে।
উপসংহার
ডিএনএ আর আরএনএ দুটোই জীবিত সত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এদের কাজ এবং গঠন আলাদা হলেও, দুটোই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। ডিএনএ আমাদের বৈশিষ্ট্যগুলো ধরে রাখে আর আরএনএ সেই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
আশা করি এই লেখাটি পড়ে সহজ বাংলায় ডিএনএ ও আরএনএ-এর পার্থক্য ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।