জন্মের পর অনেক নবজাতকই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হয়, যেমন কম ওজন, শ্বাসকষ্ট, বা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা। এ ধরনের নবজাতকদের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ চিকিৎসা ও যত্ন, যা সাধারণ হাসপাতালের ওয়ার্ডে সম্ভব নয়। এই ধরনের শিশুদের জন্য রয়েছে NICU বা Neonatal Intensive Care Unit—বাংলায় যাকে আমরা বলি নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট। এই ইউনিট নবজাতক শিশুদের সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
NICU এর পূর্ণরূপ
NICU-এর পূর্ণরূপ হলো Neonatal Intensive Care Unit। বাংলা ভাষায় এর অর্থ হলো “নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট”। এটি মূলত সেই শিশুদের জন্য ব্যবহৃত হয় যারা জন্মের পর জটিল শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়, এবং তাদের উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।
NICU এর প্রয়োজনীয়তা
নবজাতকের জন্মের পরে কিছু শিশু স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে না, তাদের হৃদপিণ্ডের সমস্যা থাকতে পারে, অথবা কোনো নির্দিষ্ট কারণে তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। NICU ইউনিট সেই শিশুগুলির যত্ন নেয় যারা:
- প্রিম্যাচিউর (সময়ের আগে) জন্ম নেয়।
- জন্মের সময় খুব কম ওজন নিয়ে জন্মায়।
- জন্মের পর শ্বাসকষ্ট, সংক্রমণ, বা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছে।
NICU-তে শিশুরা বিশেষায়িত ডাক্তার, নার্স, এবং উন্নত যন্ত্রপাতির সাহায্যে চিকিৎসা পায়, যা তাদের সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করে।
NICU তে কাদের রাখা হয়?
সাধারণত নবজাতকদের যদি নিম্নলিখিত কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তবে তাদের NICU-তে রাখা হয়:
- প্রিম্যাচিউর বেবি:
যদি শিশুটি নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মায়, অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহের আগে, তবে তাকে NICU-তে রাখা হতে পারে কারণ তাদের শরীর সম্পূর্ণ পরিণত হয় না। - শ্বাসকষ্ট:
জন্মের পরপরই শিশুরা শ্বাস নিতে সমস্যা করতে পারে। শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা সমাধানের জন্য NICU-তে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা করা হয়। - সংক্রমণ:
অনেক সময় জন্মের পর নবজাতকদের সংক্রমণ দেখা দেয়। এই সংক্রমণের চিকিৎসা NICU-তে দক্ষতার সাথে করা হয়। - হার্টের সমস্যা:
নবজাতকের হার্টে কোনো সমস্যা থাকলে, যেমন হার্টের ছিদ্র বা অস্বাভাবিক হার্টবিট, NICU তে বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
NICU তে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
NICU-তে নবজাতকদের সুস্থ করতে এবং চিকিৎসা দিতে উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। কিছু উল্লেখযোগ্য যন্ত্রপাতি হলো:
- ইনকিউবেটর:
এটি নবজাতকদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ইনকিউবেটর একটি ছোট বক্সের মতো যেখানে শিশুর শরীরকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয় যাতে তাদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সুবিধা হয়। - ভেন্টিলেটর:
শ্বাসকষ্টে ভোগা শিশুদের শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়। এটি নবজাতকদের ফুসফুসকে শ্বাস নিতে সহায়তা করে। - মনিটরিং ডিভাইস:
শিশুর হৃদপিণ্ডের গতি, রক্তের অক্সিজেন লেভেল, এবং শ্বাসের গতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন মনিটরিং ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।
NICU তে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা
NICU তে যারা কাজ করেন তারা বিশেষ প্রশিক্ষিত। এখানে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের neonatal care এর ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হয়। তাদের মধ্যে রয়েছে:
- নিওনেটোলজিস্ট: যারা নবজাতকদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ।
- নার্স: যারা শিশুদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় যত্ন প্রদান করেন।
- ফিজিওথেরাপিস্ট: যাদের দায়িত্ব হলো শিশুর শারীরিক উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও অনুশীলন নিশ্চিত করা।
NICU তে কতদিন থাকতে হয়?
নবজাতকের শারীরিক অবস্থা অনুসারে, NICU তে থাকার সময়সীমা নির্ধারিত হয়। কিছু নবজাতক কয়েকদিনের জন্য NICU তে থাকে, আবার কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এটি কয়েক সপ্তাহ বা মাসও হতে পারে। শিশুর ওজন, শ্বাসকষ্টের অবস্থা, এবং অন্যান্য জটিলতার ভিত্তিতে চিকিৎসকরা এই সময় নির্ধারণ করেন।
NICU এর গুরুত্ব
NICU-র গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিম্যাচিউর বা অসুস্থ নবজাতকদের বাঁচিয়ে রাখতে এবং সুস্থ করতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। একদিকে যেমন এটি নবজাতকের জীবন রক্ষা করে, তেমনই এটি শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক উন্নয়নে সহায়ক।
উপসংহার
NICU, বা নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট, নবজাতক শিশুদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি সেইসব শিশুদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে, যাদের জীবন শুরুর মুহূর্ত থেকেই বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে NICU নবজাতকদের সুস্থ জীবনের পথে অগ্রসর করে।