MMS এর পূর্ণরূপ হলো “Multimedia Messaging Service”। এটি একটি মোবাইল ফোন প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ছবি, ভিডিও, অডিও এবং অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট পাঠানো যায়। সাধারণভাবে বলতে গেলে, MMS হলো SMS-এর একটি উন্নত সংস্করণ, যেখানে শুধুমাত্র টেক্সট বার্তা পাঠানোর বদলে মাল্টিমিডিয়া ফাইলও পাঠানো সম্ভব হয়।
বাংলাদেশে MMS সেবা প্রচলিত হলেও ইন্টারনেট ও মোবাইল ডেটা সুবিধা সহজলভ্য হওয়ার ফলে এখন অনেকেই সরাসরি মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইত্যাদি অ্যাপ ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়া মেসেজ আদান-প্রদান করেন। তবে এখনো কিছু ক্ষেত্রে MMS সেবা ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে যেখানে স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট সুবিধা নেই।
MMS কীভাবে কাজ করে?
MMS মূলত মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। যখন আপনি কোনও MMS বার্তা পাঠান, তখন সেটি আপনার মোবাইল অপারেটরের সার্ভারে জমা হয়। এরপর সেই সার্ভার থেকে বার্তাটি প্রাপকের মোবাইল নম্বরে প্রেরণ করা হয়। MMS বার্তা সাধারণত ইমেজ, ভিডিও, অডিও ফাইল এবং টেক্সটের সমন্বয়ে তৈরি হয়।
এটি মোবাইল ডেটা বা ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে, তবে প্রেরক এবং প্রাপক উভয়কেই MMS পরিষেবা সমর্থন করে এমন একটি ডিভাইস এবং সিম ব্যবহার করতে হবে।
MMS এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ
- মাল্টিমিডিয়া বার্তা:
MMS এর মাধ্যমে শুধুমাত্র টেক্সট নয়, ইমেজ, ভিডিও এবং অডিওসহ বিভিন্ন ধরণের মাল্টিমিডিয়া বার্তা পাঠানো যায়। - ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন:
MMS পাঠানোর জন্য মোবাইল ডেটা বা ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হয়। যদিও এটি সাধারণত মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়, তবুও ডেটা সংযোগ অপরিহার্য। - ফাইল আকার সীমাবদ্ধতা:
MMS এর মাধ্যমে পাঠানো ফাইলের আকার একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সাধারণত ৩৫০ কিলোবাইট থেকে ১ মেগাবাইট পর্যন্ত ফাইল প্রেরণ করা যায়। এটি মোবাইল অপারেটর বা সার্ভিস প্রোভাইডারের উপর নির্ভর করে। - বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি:
MMS হলো একটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত প্রযুক্তি যা প্রচুর মোবাইল নেটওয়ার্কে সমর্থন করে। তবে ইন্টারনেট সুবিধার ব্যাপক বিস্তার ও উন্নত অ্যাপ্লিকেশনগুলো বাজারে আসার ফলে MMS এর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে এসেছে।
MMS এর ব্যবহার ও সুবিধা
১. ব্যক্তিগত বার্তায়:
ব্যক্তিগতভাবে ছবি, অডিও বা ভিডিও বার্তা প্রেরণের জন্য MMS ব্যবহৃত হয়। যেমন: জন্মদিনের শুভেচ্ছা, ভ্রমণের ছবি, ছোট ভিডিও ক্লিপ প্রেরণ করতে MMS ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. বাণিজ্যিক যোগাযোগে:
অনেক কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে গ্রাহকদের জানাতে MMS ব্যবহার করে। যেমন: নতুন পণ্য লঞ্চ, ডিসকাউন্ট অফার বা বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় MMS ব্যবহার করা হয়।
৩. শিক্ষামূলক কাজে:
শিক্ষামূলক মেসেজ, তথ্যবহুল ভিডিও বা ছবি প্রেরণেও MMS ব্যবহার করা যায়। এটি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরবর্তী শিক্ষায় একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে।
৪. বিপণন ও বিজ্ঞাপনে:
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য এবং সার্ভিস সম্পর্কে জানাতে MMS ব্যবহার করে। বিশেষ করে যেখানে মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট প্রয়োজন হয়, যেমন প্রোডাক্টের ছবি বা বিজ্ঞাপন।
MMS এর সীমাবদ্ধতা
MMS এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা এটি ব্যবহার করার সময় মাথায় রাখা জরুরি।
১. ডেটা চার্জ:
MMS পাঠাতে মোবাইল ডেটা বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়, এবং অনেক ক্ষেত্রে এর জন্য আলাদা চার্জ প্রযোজ্য হয়। SMS এর তুলনায় এটি কিছুটা ব্যয়বহুল।
২. ফাইল সাইজ লিমিটেশন:
MMS এর মাধ্যমে বড় আকারের ফাইল পাঠানো সম্ভব নয়। ফাইল আকার সীমাবদ্ধ হওয়ার কারণে বড় ভিডিও বা উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি পাঠানো কঠিন।
৩. ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন:
MMS ব্যবহার করার জন্য ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা প্রয়োজন। ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে বার্তা প্রেরণ করা সম্ভব হয় না।
৪. অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সহজতর বিকল্প:
বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো এর মতো অ্যাপগুলোতে ছবি, ভিডিও এবং অডিও পাঠানো আরও সহজ এবং দ্রুত হওয়ায় MMS এর জনপ্রিয়তা কমে গেছে।
MMS এবং SMS এর মধ্যে পার্থক্য
MMS এবং SMS (Short Message Service) এর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচের টেবিলে তা তুলে ধরা হলো:
বৈশিষ্ট্য | SMS (Short Message Service) | MMS (Multimedia Messaging Service) |
---|---|---|
কন্টেন্ট টাইপ | শুধুমাত্র টেক্সট বার্তা | মাল্টিমিডিয়া (ছবি, ভিডিও, অডিও) ও টেক্সট |
ফাইল আকার | ১৬০ ক্যারেক্টারের মধ্যে সীমাবদ্ধ | বড় আকারের ফাইল (সীমাবদ্ধ) প্রেরণ করা যায় |
ইন্টারনেট প্রয়োজন | ইন্টারনেট প্রয়োজন হয় না | ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন |
চার্জ | কম খরচ | তুলনামূলকভাবে বেশি চার্জ প্রযোজ্য |
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে MMS এর ব্যবহার
বাংলাদেশে MMS এর ব্যবহার অনেকটা কমে এসেছে, কারণ অধিকাংশ মানুষ এখন মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন। তাছাড়া, মোবাইল অপারেটরগুলোর চার্জ বেশি হওয়ার কারণে MMS এর ব্যবহার কম জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
তবে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না কিংবা যাদের কাছে ইন্টারনেট সহজলভ্য নয়, তারা এখনো MMS ব্যবহার করেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল, সেখানে MMS এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
উপসংহার
MMS একটি উন্নত মেসেজিং সিস্টেম, যা মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও ইন্টারনেট সুবিধার প্রসার এবং আধুনিক মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কারণে MMS এর ব্যবহার কিছুটা কমে গেছে, তবে এটি এখনও কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য।