মাইগ্রেন শব্দটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশ পরিচিত। এটি একধরনের তীব্র মাথাব্যথা যা সাধারণ মাথাব্যথার থেকে বেশ ভিন্ন এবং এর অনেক উপসর্গ থাকে। মাইগ্রেন সাধারণত মাথার একপাশে অনুভূত হয় এবং এর সাথে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, শব্দে অস্বস্তি এবং কখনও কখনও বমি বমি ভাব থাকে। এটি অল্প সময়ের জন্য শুরু হয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
মাইগ্রেনের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ
মাইগ্রেনের উপসর্গ অনেকের জন্যে বিভিন্ন রকম হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:
- তীব্র মাথাব্যথা: মাইগ্রেনের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো মাথার এক পাশে তীব্র ব্যথা।
- আলো এবং শব্দে সংবেদনশীলতা: মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত আলো এবং শব্দে অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
- বমি বমি ভাব: অনেক সময় মাইগ্রেনের সাথে বমি বমি ভাবও থাকে।
- দৃষ্টিবিভ্রম: মাইগ্রেনের আগে অনেকেই দৃষ্টিতে ঝাপসা ভাব বা দৃষ্টিবিভ্রমের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
- শরীর দুর্বলতা: মাইগ্রেনের সময় শরীর দুর্বল বোধ করতে পারে, এবং কিছু সময় কাজে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
মাইগ্রেনের কারণ
মাইগ্রেন কেন হয়, তার নির্দিষ্ট কারণ এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে কিছু সাধারণ কারণ এবং প্রভাবক রয়েছে:
- পারিবারিক ইতিহাস: মাইগ্রেনের একটি সাধারণ কারণ হলো পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক্স।
- হরমোনের পরিবর্তন: মহিলাদের মধ্যে বিশেষ করে মাসিক চক্রের সময় হরমোন পরিবর্তনের কারণে মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- খাদ্যাভ্যাস: চকলেট, ক্যাফেইন, লবণাক্ত খাবার বা অ্যালকোহল জাতীয় কিছু খাবার মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।
- মানসিক চাপ: মানসিক চাপ, কাজের চাপ বা পারিবারিক চাপ মাইগ্রেনের একটি কারণ হতে পারে।
- নিদ্রাহীনতা: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মাইগ্রেনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মাইগ্রেনের প্রকারভেদ
মাইগ্রেনের বেশ কয়েকটি ধরন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো:
১. উইথ অরা মাইগ্রেন (Migraine with Aura)
এই মাইগ্রেনের সময় চোখের সামনে ঝাপসা দেখা, চোখে লাইন বা স্পট দেখা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।
২. উইদাউট অরা মাইগ্রেন (Migraine without Aura)
এই ধরনের মাইগ্রেনে অরা ছাড়াই সরাসরি মাথাব্যথা শুরু হয়।
৩. ক্রনিক মাইগ্রেন (Chronic Migraine)
ক্রনিক মাইগ্রেন এক মাসে ১৫ দিন বা তার বেশি সময় ধরে দেখা দেয়।
পরিসংখ্যান ও গবেষণা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, প্রতি বছর প্রায় ১১% মানুষ মাইগ্রেন সমস্যায় ভোগে। এছাড়া, একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে মহিলাদের মধ্যে মাইগ্রেনের প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)
মাইগ্রেন প্রতিরোধে করণীয়
মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে কিছু সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়:
- পর্যাপ্ত ঘুম: দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম মাইগ্রেন প্রতিরোধে সহায়ক।
- পর্যাপ্ত পানি পান: পানি শূন্যতা মাইগ্রেনের একটি বড় কারণ, তাই পানি পানে সতর্ক থাকা উচিত।
- নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে এবং মাইগ্রেনের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
- খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ: চকলেট, ক্যাফেইন, বা খুব মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন বা শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের ব্যায়াম করা যেতে পারে।
মাইগ্রেনের চিকিৎসা
মাইগ্রেনের চিকিৎসায় সাধারণত পেইন কিলার বা নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কিছু ওষুধ মাইগ্রেনের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে এবং কিছু ওষুধ সরাসরি মাইগ্রেন প্রতিরোধে কার্যকর। তবে মাইগ্রেনের জন্য স্ব-চিকিৎসার পরিবর্তে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
উপসংহার
মাইগ্রেন একটি সাধারণ কিন্তু কষ্টদায়ক রোগ যা অনেকের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ কমানো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করে মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।